বৃহস্পতিবার , ১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৭ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

রমা চৌধুরী

প্রকাশিত হয়েছে-

দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম নারী হিসেবে যিনি স্নাতকোত্তর পাস করেছিলেন, তাঁর নাম রমা চৌধুরী। তাঁর পড়াশোনার বিষয় ছিল ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য’। জন্মেছিলেন বোয়ালখালী থানার পোপাদিয়া গ্রামে, ১৯৪১ সালের ১৪ অক্টোবর। শুধু এটুকুই তাঁর পরিচয় হতে পারত। কিন্তু তিনি এর চেয়েও বেশি কিছু—একাত্তরের বীরাঙ্গনা, শিক্ষক, লেখক।

রমা চৌধুরী ‘একাত্তরের জননী’ বইয়ে বর্ণনা করেছেন, কীভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাঁর বাড়িতে হামলা চালায়। সেই বর্ণনা থেকে পাঠক জানতে পারে শুধু রমা নন, একাত্তরের ১৩ মে তাঁদের পাড়ার যুবতী মেয়ে, বউ, গর্ভবতী নারী কেউই বাদ যায়নি হানাদারদের নির্যাতন থেকে। তিনি লিখেছেন, ‘কত মেয়েকে যে ধর্ষণ করেছে পিশাচগুলো, তার কোনো ইয়ত্তা নেই।’

তাঁকে নির্যাতনের পর তিনি কোনোরকমে পালিয়ে বাড়ির পাশের পুকুরে লুকিয়েছিলেন। সেখান থেকেই দেখতে পান গানপাউডার দিয়ে তাঁদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় পাকিস্তানি সেনারা।

এরপর স্বাধীনতার আগপর্যন্ত আট মাস দিনের বেলায় বনে-জঙ্গলে পালিয়ে বেড়িয়েছেন বৃদ্ধ মা আর তিন সন্তানকে নিয়ে। পুড়ে যাওয়া ভিটায় গিয়ে মাথার ওপর খড়কুটো কিংবা পলিথিন দিয়ে রাতটা কোনোরকমে পার করতেন। চালচুলোহীন অবস্থায় রোগে ভুগে হারাতে হয় দুই সন্তানকে। সেই থেকে খালি পায়ে হাঁটেন তিনি। মাঝে স্বজনদের অনুরোধে অনিয়মিত জুতা পায়ে দিলেও ১৯৯৮ সালে তৃতীয় সন্তানকে সড়ক দুর্ঘটনায় হারিয়ে আর কখনো জুতা পরেননি। প্রথমে চাকরিজীবন শিক্ষকতা দিয়ে শুরু করলেও, পরে লেখালেখিটাকেই ভালোবেসেছিলেন বেশি।

শুরুর দিকে একটি পাক্ষিক পত্রিকায় লিখতেন। সম্মানী নিতেন না। তবে সেই পত্রিকার ৫০ কপি নিতেন। সেগুলো বিক্রি করে কোনোমতে চালাতেন সংসার। এরপর বই লিখতে শুরু করেন। চট্টগ্রামের রাস্তায় রাস্তায় রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, খালি পায়ে গুটি গুটি হেঁটে সেই বই বিক্রি করতেন রমা চৌধুরী।
বিড়ালপ্রেমী এই মানুষটা তাঁর আটটি বই উৎসর্গ করেছিলেন আটটি বিড়ালকে। প্রিয় পোষ্য বিড়ালকে খাওয়াতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এরপর ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পরপারে পাড়ি জমান তিনি।